জীবন আগে, শিক্ষা আগে নয়। যেখানে ঘরের মধ্যে আগুনের হলকা, ঘরের বাইরেও আগুনের হলকা, রাস্তায় অগ্নিমূখর তীব্র তাপদাহে প্রাণঘাতির সম্ভাবনা। সেখানে শিক্ষা আগে না জীবন আগে। ঘরে, বাইরে ও রাস্তায় তীব্র অগ্নিদাহে আবাল-বৃদ্ধবণিতা যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। সেখানে রাস্তায় বের হবে শিশুরা ? এটা কিভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন সরকার ? শিশুদের প্রাণের নিশ্চয়তা দিবেন তো সরকার ? ভাবতে অবাক লাগে, কি চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রিয় সন্তানের মা বাবা কি এই তীব্র অগ্নিদাহে আপনার সন্তানকে রাস্তায় বের হতে দিবেন তো ? সন্তানের মা বাবারা আপনার সন্তানের জন্য যেটা সঠিক সেটাই নিশ্চয় করবেন। আমি একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বলব শিশু অধিকার রক্ষায় এই তীব্র অগ্নিদাহে আপনার সন্তানকে ঘরের বাইরে ঠেলে দিবেন না। জীবন আগে, শিক্ষা আগে নয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে তীব্র তাপদাহে ঘরের বাইরে বের হবেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলেন, এই প্রশ্ন দেশের সচেতন মহলের। চলতি মাসে ২৫ দিন অগ্নিমূখর তীব্র তাপদাহ আবহাওয়া চলছে। আরও এক সপ্তাহ অগ্নিমূখর তীব্র তাপদাহ চলমান থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়। ১৯৪৮ সালের পর ৭৬ বছরের মধ্যে এ বছরের তীব্র তাপদাহ আবহাওয়া রেকর্ড ভাঙ্গল। এদিকে রবিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিমূখর তীব্র তাপদাহে শতাধিক শিশু কিশোর স্কুলে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়া ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় ১৮ জন শিশু কিশোর স্কুলে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যশোর ও নরসিন্ধীতে ২জন শিক্ষক হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতার করেছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। ২৭ এপ্রিল অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানতে বাধ্য হলেও যদি কোন শিক্ষার্থীর শারীরিক কোন ক্ষতি বা জীবন বিপন্ন হয়, তবে এর দায়ভার সম্পূর্ণ সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে। সংগঠনের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, তীব্র তাপদাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইনে শ্রেণি কায়ৃক্রম তথা পাঠ্য পরিচালনা করার দাবি কওে আসছিল এই সংগঠনটি। কিন্তুখোলার পর তীব্র তাপদাহের মধ্যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু এতে যদি শিক্ষার্থীদের জীবনের ক্ষতি হয়, তার সব দায়ভার সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে। সংগঠনটি বলছে, যেখানে বয়ষ্করা প্রয়োজন ছাড়া বাইওে বের হচ্ছে না। সেখানে শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহুর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত না করে আর একটু অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এই সময়টুকুতে পড়াশুনা তেমন কিছু হতো না। এখনই এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে অন্তত: আগামী এক সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাতক্ষীরা মুক্তিযোদ্ধা সড়কের বাসিন্দা লিপি রাণী ম-ল বলেন, রবিবার স্কুল খোলায় তার মেয়ে স্বস্তিকা ম-ল তীব্র তাপদাহে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে সাতক্ষীরা সিলভার জুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণিতে পড়ে।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: আজিজুর রহমান বলেন, শিশুদের জীবন আগে, শিক্ষা আগে নয়। তিনি বলেন, এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে শিশুদের কোন মতেই বাইরে যাওয়া যাবে না। তাহলে শিশুরা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। আগমী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে তাপমাত্রা সহনশীল হলে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো যেতে পাওের এর আগে কোনভাবেই সম্ভব নয়। লেখাপড়ায় ঘাটতি পড়ার কথায় তিনি বলেন, তার চেয়ে শিশুর জীবন অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এই তীব্র তাপমাত্রার বিষয় নিশ্চয় সরকার বিবেচণা নিবেন। বলে অভিভাবক সমাজ মনে করেন।
লেখক-একজন গণমাধ্যমকর্মী ও মানবাধিকার গবেষক, মোবাইল-০১৭১৫ ৪৮৪৮৯৮
Leave a Reply