অরুণ দেবনাথ, ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:: অপরিকল্পিতভাবে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল এ কারণে সেখানকার হনুমানগুলো আবাস হারাচ্ছে, পাচ্ছে না খাবার। তাই খাবারের খোঁজে লোকালয়ে প্রায়ই এসব হনুমানের আনাগোনা দেখা যায়। সড়কের পাশে এমনকি বাসাবাড়িতেও খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ে হনুমানের দল। ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়ায় হনুমানের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ স্থানীয় আম চাষি সহ মাঠের কৃষকেরা। কালের বিবর্তনে পরিকল্পিত বনানয়ন করার নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাড়ি ঘর নির্মান,ইটভাটায় জ্বালানী হিসাবে কাঠের ব্যাবহার করতে গিয়ে নির্বিচারে বনভূমি নিধন। যার কারণে হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। ফলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে এসে অবস্থান নিচ্ছে হনুমানের দল। বিশেষ করে ফলদ আমের বাগান ও ক্ষুদ্র সবজি চাষিরা আছে বিপাকে। দলবেঁধে ২০/২৫টি হনুমান খাবারের জন্য বাসাবাড়িতে ও গাছে গাছে ঝুলতে দেখাযায়। প্রাকৃতিক খাবারের অভাবে কখনো কখনো মানুষের ঘরে প্রবেশ করে রান্না করা খাবারও খেয়ে ফেলে। গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার দেশি মুরগি পালন করে কিন্তু সুযোগ পেলেই ডিম খেয়ে ও নষ্ট করে অবর্ণনীয় ক্ষতি করছে এই হনুমানের দল। সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বানিজ্যিক ও বাসভবনের ছাদের উপর, আশেপাশে সীমানায় হনুমান দলবেঁধে লাফালাফি করে। সুযোগ পেলেই প্রবেশ করবে রুমে ও ফলন্ত গাছে। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে এরা দ্রুত পালিয়ে যায় যা অবাক করার মত কান্ড। এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলার খর্ণিয়া এলাকার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক প্রনব কুমার ঘোষ এর সাথে । তিনি জানান,
আমার বাড়ির পাশে ৪ একর জমিতে আমের বাগান গত বছর সেখানে আম ৪/৫ লক্ষ টাকা বেচা বিক্রি হলেও এবার ৫০ হাজার টাকাও বিক্রি হবেনা। হনুমানের খাদ্য অভাবে আমের গুটি বেছে নিয়েছে মনে হয়। এতোই বেড়েছে হনুমানের উপদ্রব। শুধু আমি না এলাকায় অনেকে বানিজ্যিক ভাবে সবজি চাষি যারা ফসল উৎপাদন করে বিক্রির স্বপ্ন দেখছে তখন সবজি খেতে গিয়ে দেখে হনুমানের উপদ্রবে কোন শাক-সবজির অস্তিত্ব নাই। ফলে সবজিচাষ হতে ধীরে ধীরে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এর প্রভাবে বাজারে বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম।
স্থানীয় সবজিচাষী মেম্বার হজরত আলী বলেন, আমি সব সময় শাকসবজি, ফলফলাদি চাষাবাদ করি কিন্তু হনুমানের উপদ্রবে বর্তমান চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছি। আমার মতো আরো অনেকে চাষাবাদ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। হনুমানের জন্য একটি অভয়ারণ্য করে তাদের জন্য সরকারি ভাবে খাদ্যের ব্যবস্থা করা দরকার। কখনো কখনো গ্রামের মানুষ হনুমান পিটাতে বাধ্য হচ্ছে। কাজেই হনুমানের সংখ্যা কমার আশঙ্খাও করছেন অনেকে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণীর কোন বিকল্প নাই।
উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিদারুল হোসেন দিদার জানান, হনুমানের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ সময় সময় হনুমান এসে অনেক কৃষকের রোপায়িত ফল মূল নষ্ট করে ফেলছে শুনছি তাছাড়া হাস মুরগীকে খাবার দিলে তা নিয়ে যায়। রান্না ঘরের চালের টিন হনুমান যাতায়াত করতে সব নষ্ট করে ফেলেছে। খর্নিয়া বাজার ব্যবসায়ী মঞ্জুর রহমান ও নুর ইসলাম জানান, হনুমান এলাকাবাসিকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সকল ফলমূল সাবাড় করছে। বন্যপ্রাণী বনে না থেকে লোকালয়ে এসে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এবিষয় সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, বন্যপ্রাণী হল আমাদের বনজ সম্পদ আমাদের ঐতিহ্য এরা বন হতে লোকালয়ে আসছে খাদ্য সংকটের ফলে। বনের মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার না থাকার ফলে লোকালয়ে আসছে। তাই বলে বন্যপ্রাণীকে হত্যা করা, অতিষ্ঠ করা বা আহত করা যাবেনা। বন্যপ্রাণী দ্বারা কোন মানুষ হত্যা, আহত হওয়া বা কোন ধরনের ঘর—বাড়ি বিনষ্ট হলে সরকার তা পুষিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে।