ফেনী:: ভারতীয় পানির চাপে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৮ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ৪১৫ টাকার সম্পূর্ণ ক্ষতি ও ১৪ হাজার ৪৯ কোটি ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৯ টাকার আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, কৃষি, মৎস্য, পশু, বিদ্যুৎ লাইন, মোবাইল ফোন টাওয়ার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জেলায় ২৫৫টি আধাপাকা ঘর, ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর সম্পূর্ণ ক্ষতি ও ২ হাজার ৬শ ৩২টি আধাপাকা ঘর, ৫৩ হাজার ৪শ ৩৩টি কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদে ২ হাজার ১শ ৬৪ ভেড়া, ৩০ হাজার ৬৫০ গরু, ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৭টি হাঁস, ১১ হাজার ৪৮৭টি ছাগল, ১৯৪টি মহিষ, ৫৭ লাখ ২১ হাজার ৩০১টি মুরগি ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের ৭শ ৭ কিলোমিটারের বেশি আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টি মসজিদ ও ১টি মন্দির সম্পূর্ণ এবং ১২৪২টি মসজিদ ও ১৪৩টি মন্দির আংশিক ক্ষতি হয়। সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর চৌধুরীপাড়া আল হুমায়রা বালিকা দাখিল মাদ্রাসা ও ফাজিলপুর শিবপুর উম্মুল মুমিনিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। ঘোপাল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, শুভপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পাঠাননগর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২৪টি ও ফেনী সদরে ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।
এসময় জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন জরুরি। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, ইউএনডিপি, ইউএনআরসি সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা আর্থিক সহযোগিতা করছে।
এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংগঠন সহযোগিতা করছে। সশস্ত্র বাহিনী বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে অসুস্থ ও গর্ভবতী মহিলা উদ্ধার এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে। বন্যা পরবর্তী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় বিভিন্ন মেডিকেল টিম গঠন করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি যতগুলো সংস্থা এবং সংগঠন কাজ করছে তাদের সমন্বয় জরুরি। সকল সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, চিকিৎসা, নগদ টাকাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে জোর দিতে হবে। আমরা এখন ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেছি। দ্রুত খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য নতুন বীজ বিতরণ শুরু করেছি।কোন এনজিও প্রতিষ্ঠান যাতে আগামী দুই মাস কিস্তি না নেয় সেজন্য বলে দেয়া হয়েছে।
উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান, সশস্ত্র বাহিনী ফেনীর উপঅধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার ফাহিম কবীর, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো: বাতেন, ইউনিসেফের সমন্বয়কারী মাধবী ব্যানার্জী, ইউএনআরসির প্রতিনিধি জ্যাকলিন রেবোরিয়ো, ইউনিসেফের শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ রকিবুল হাসান, মনিরুল আলম, শতাব্দী খাস্তগির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: একরামুল হক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার, ফেনী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল আজিম, সহ-সমন্বয়ক মো. সালমান, ব্র্যাকের এনজিও সমন্বয়ক খালেদ মোরশেদ প্রমুখ।
Leave a Reply